সাম্প্রতিক সময়ে ‘ট্রান্সপারেন্সি’ ও ‘অ্যাকাউন্টিবিলিটি’ শব্দ দুটো প্রায়শ বিভিন্নভাবে আমাদের সামনে আসছে। শব্দ দুটোর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ব্যক্তি জীবন থেকেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরপর পরিবার, সমাজ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র, রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্র, সরকার সকল ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা একান্ত প্রয়োজন। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু রাষ্ট্র ও সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। রাষ্ট্র ও সরকারের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে এটা নাগরিক হিসেবে সকলের ন্যায্য প্রত্যাশা ও দাবি। এর মূল উদ্দেশ্য দুর্নীতি কমিয়ে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ধারা গতিশীল করা। লক্ষণীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বলতে আসলে কী বোঝায় এবং রাষ্ট্র ও সরকার এটা অর্জনই-বা করতে পারে কীভাবে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি আছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং গণতন্ত্র বলতে বোঝায় সকলের সমান অধিকার, সমান সুযোগ, আইনের কাছে নাগরিকমাত্রের সমান আশ্রয়। অর্থাৎ বৈষম্যহীনতা গণতন্ত্রের অত্যাবশ্যক শর্ত, যেখানে নাগরিকরা নির্ভয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে ও যেকোনো বৈধ কার্যকলাপ চালাতে পারবে। কিন্তু এই বিষয়গুলোকে আমরা অন্ধের হাতি দেখার মতো করে জানি, শুনি। যে কারণে এ সম্পর্কিত ধারণা জনে জনে ভিন্ন। ব্যক্তির বাইরে প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের মতো করে এ বিষয়গুলোকে ধারণ ও চর্চা করে থাকে।
যে দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, তারা ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের হাতে সর্বময় ক্ষমতা তুলে দিয়েছে; কাজেই যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তারা তাদের মতো করে দেশ শাসন করবে। বড়জোর তারা নির্বাচনী ইশতেহারের কাছে তাদের দায়বদ্ধতার কথা বলে। আবার বিরোধী দল সরকারের কাজের বিরোধিতা করে সরকারের দোষত্রুটি বা ব্যর্থতা বৈধ-অবৈধভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরে সরকারকে ধরাশায়ী করে পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় যাওয়াই গণতন্ত্র বলে ধরে নেয়। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সরব অংশ মনে করে, জনগণের মতামত অনুযায়ীই সরকার দেশ পরিচালনা করবে। প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন, জনগণ সরকার নির্বাচন করে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা (বা সরকার পরিচালনা) করার জন্য, ‘দেশ শাসন’ করার জন্য নয়– আমরা আর কারো কলোনি (colony) নই যে কেউ আমাদের শাসন করবে।
এটা ঠিক যে, নির্বাচনী পদ্ধতি অনুযায়ী রাষ্ট্রের সিংহভাগ নাগরিক রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কোনো একটি রাজনৈতিক দল বা জোটের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সিংহভাগ মানে অবশ্যই শতভাগ না। দেশের সকল নাগরিক নির্দিষ্ট একটি দল বা জোটকে ভোট দেয় না। অনেক নাগরিক নির্বাচিত দল বা জোটের বিরুদ্ধেও ভোট দেয়। কিন্তু তবু, যখন নির্বাচিত দল বা জোট সরকার গঠন করে, তখন তারা কেবল তাদের দল বা জোটের সমর্থক বা ভোটারদেরই সরকার হয় না, সরকার হয় দেশের সকল নাগরিকের। সংগত কারণে দেশের সকল নাগরিকই সরকারের কাছে আইনের সমান আশ্রয়/প্রশ্রয় পাবার অধিকারী। এখন প্রশ্ন হলো সকল জনগণ বা সিংহভাগ জনগণের মতানুযায়ী সরকার কীভাবে দেশ চালাবে।
রাষ্ট্রের ১৬ কোটি মানুষের ১ কোটি মত, মোটাদাগে রেখা টানলেও কমপক্ষে ১০০টি মত। কিন্তু ১০০টি মত অনুযায়ী তো দেশ চলে না, চলতে পারে না । রাষ্ট্রকে যেকোনো বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অর্থাৎ একটি মতকে প্রাধান্য দিতে হয়। এই একটি মত কোন মত? অবশ্যই নির্বাচিত দল বা জোটের মনগড়া কোনো মত নয়।
রাষ্ট্রের বা সরকারের মত নির্ধারণ করবার জন্য রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো আছে, প্রতিষ্ঠান আছে; যেমন আইনসভা (জাতীয় সংসদ), নির্বাহী বিভাগ (প্রশাসন) ও বিচারবিভাগ। নীতি ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য গাইডিং প্রিন্সিপাল বা পথপ্রদর্শক নীতি হিসেবে আছে রাষ্ট্রের সংবিধান। এই সংবিধানের ভিত্তিতেই প্রণীত হয় আইন, বিধি, উপবিধি, প্রবিধি, কর্মপরিকল্পনা, বাজেট ইত্যাদি এবং এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন-বিধি বাতিল হয়ে যায়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা ঘোষণার আলোকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী শোষণমুক্ত-বৈষম্যহীন-অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ৩০ লক্ষ শহীদ, ৪ লক্ষাধিক যৌন নির্যাতনের শিকার নারী, ১ কোটি শরণার্থী ও সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি ঋণ বা কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ এই বাংলাদেশ। এরই বহিঃপ্রকাশ বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানের আলোকেই আমাদের পথ চলতে হবে। কারণ নীতি ও আদর্শগতভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দায়বদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছে, জাতীয় পতাকা দিয়েছে, জাতীয় সংগীত দিয়েছে, ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়েছে; যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে আমরা আইনগতভাবে পেয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পানীয়জল-স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা ভোগের অধিকার। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে এ কারণেও যে, আজ আমরা যাঁদের সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষ বলে চিনি, যাঁরা রাজনীতিতে আছেন ও ক্ষমতায় যান, সংসদ সদস্য হন, সংসদ নেতা ও উপনেতা হন, বিরোধী দলীয় নেতা ও উপনেতা হন, মন্ত্রী হন, বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, সরকারি-বেসরকারি খাতে যাঁরা উচ্চপদে আসীন, যাঁরা সশস্ত্রবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশই এই জীবনের স্বাদ পেতেন না যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো। পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা আমাদের সেই বিষয়টিই শিক্ষা দেয়। সুতরাং বৈষয়িক স্বার্থের খাতিরে হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সশ্রদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা তাঁদের প্রত্যেকের ইমানি দায়িত্ব। এর অন্যথা হলে তাঁদের বেঈমান বলে চিহ্নিত করলে যৌক্তিকভাবে কারো আপত্তি করার সুযোগ থাকে না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে যাঁরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান তাঁদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি হলো বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী জনগণই রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সংবিধানের ৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।” কাজেই নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে এবং যাঁরা বিরোধী দলে থেকে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনা করায় ভূমিকা রাখবে, তাঁদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রতি জবাবদিহির বিষয় থেকে যায়। সেজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই রাষ্ট্রের সার্বভৌম গাইড তথা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনী ইশতেহার প্রণীত হওয়া উচিত, যে ইশতেহারের মাধ্যমে ভোটপ্রার্থী দল নির্বাচিত হলে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এবং সংবিধানকে রক্ষায় দলটি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বচ্ছ ধারণা দেবে। ক্ষমতায় আসীন হবার পর রাষ্ট্র ও তার জনগণের উন্নয়নের জন্য সরকার যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, সেখানে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু রাখার এখতিয়ার সরকারের নেই। যখন বাজেট ঘোষণা করা হবে তখনো ওই ভিত্তিতেই সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকরণসহ সকলের আয়-রুজির ব্যবস্থার দিকে নজর রাখতে হবে। এমনকি যাঁরা বিরোধী দলে থেকে সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করবেন তাঁদেরও করতে হবে ওই একই অবস্থান থেকে। একইভাবে নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদ সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে এবং সংবিধান সমুন্নত রাখায় একই লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। যেমন কোনো রাজনৈতিক দল যদি গণতন্ত্রের অপব্যবহার করে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার মতো অসাংবিধানিক দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে, তবে তাকে সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কিংবা কেউ যদি দেশের কোনো নাগরিকের জন্মস্থান বা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন, তা-ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না-পারায় সংবিধান অনুযায়ী তাদের ভূমিকা পালন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনই জাতীয় সংসদের কার্যক্রমও জনগণকে হতাশ করছে।
গণতন্ত্রে সবারই মতপ্রকাশের অধিকার আছে; কিন্তু নিজের মতকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া বা অন্যের অধিকারকে খর্ব করে এমন মত গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে না। নাগরিকদের মধ্যে কে আস্তিক কে নাস্তিক, কে নামাজ পড়ে কে পড়ে না, কে ঘোমটা দেয় কে দেয় না এসব দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব না। কেউ ধর্মকর্ম না-করলে, নাস্তিক হলে, তার শাস্তি যদি থাকে তবে সে বিষয়ে যার যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন। সৃষ্টিকর্তা এর জন্য কাউকে পেয়াদা করে পাঠান নি। বড়জোর ধর্মীয় নেতাদের এক্ষেত্রে দায়িত্ব হতে পারে তাদের ধর্মের পথে আহ্বান করা, কিন্তু কোনোভাবে জোর প্রয়োগ করার অধিকার তাদের নেই। তাঁরা যদি এটা মানেন যে, আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান তবে তাঁর ওপরেই এসব বিচারের দায়িত্ব দিয়ে তাদের নিজ নিজ কর্মে মনোনিবেশ করা উচিত। একইভাবে সংবিধান অনুযায়ী সরকারেরও নাগরিকদের ধর্ম বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের ওপরে দায়িত্ব অর্পিত আছে আইন না-মানলে, দুর্নীতি করলে, চুরি-ডাকাতি করলে, বেআইনি কাজ করলে তার বিচার করা ও বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তার জন্য শাস্তি বিধান করা। যথাযথভাবে এ কাজ করতে সরকার জনগণ ও সংবিধানের কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী এ কাজ না-করলে সরকারের কার্যকলাপ দেখভালে নিয়োজিত স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ, বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনসমূহ, বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিকগণ প্রশ্ন তুলতে পারেন। আইন অনুযায়ী আদালত সরকারের বিরুদ্ধে রুলও জারি করতে পারেন। কিন্তু নাগরিকদের ধর্মকর্মের মতো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে রাষ্ট্র, সরকার, কোনো রাজনৈতিক দল বা যেকোনো পর্যায়ের নাগরিকদের প্রশ্ন তোলা অসাংবিধানিক। আমরা দেখছি এখানে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার চরম ব্যত্যয় ঘটছে এবং নাগরিক সমাজ এখানে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে; যথাযথভাবে সোচ্চার হচ্ছে না।
সুতরাং কোনো রাজনৈতিক দল ধর্মকে ব্যবহার করে দেশের নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সংবিধান অনুযায়ী ওই দলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এরকম কার্যকলাপের রেকর্ড থাকলে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের সুযোগ পাবে না, আর যারা ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে, এই মর্মে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালায় শর্ত যুক্ত হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে আরো বলা দরকার যে, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন নারীসমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। যাঁরা এই আসন অলঙ্কৃত করে আছেন, তাঁদের নারী আন্দোলনের কাছে ও নারী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের নারীসমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকার কথা। যদি তা না-করে তাঁরা এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করেন, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটা হবে তাঁদের দায়বদ্ধতার অভাব। সেই ক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহিতার প্রশ্নও সামনে আনতে হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে কারো এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জাতীয় সংসদে তাঁদের সাম্প্রতিক অসংসদীয় কার্যকলাপ নারীসমাজসহ দেশের সকল মানুষকে স্তম্ভিত করছে। নারীসমাজ ও নারী আন্দোলন, সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের দলের লাঠিয়াল হিসেবে দেখতে চায় না। বরং দেখতে চায় তাঁরা জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে দেশ, দেশের মানুষ বিশেষ করে নারীসমাজ ও দেশের সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে যথাযথভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।