যুক্তি বা বাস্তবতা দিয়ে যাচাই না-করে হুজুগে চলা এবং ভাবাবেগে তাড়িত হবার বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আমাদের কুখ্যাতি থেকেই ‘চিলে কান নিয়েছে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ানো’র পরিচিত প্রবাদটির প্রচলন। সাধারণত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, যুক্তি দিয়ে বিচার করবার প্রক্রিয়া থেকে বিযুক্ত মানুষের মধ্যেই এ প্রবণতা লক্ষণীয় হবার কথা। কিন্তু সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কিছু সাধারণ প্রভাব সবার মধ্যে থেকে যাওয়াটি অস্বাভাবিক নয়; বিশেষত যে সমাজে বিদ্যায়তনগুলোতে যুক্তি, বুদ্ধি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা এখনো যথাযথ স্থান করে নিতে পারে নি, সেখানে এমন প্রবণতা শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও থেকে যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে হুমায়ূন আহমেদের দুঃখজনক অকালমৃত্যু-পরবর্তী একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কেন্দ্রিক ঘটনাবলি এবং আমাদের জাতীয় অহংকার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ ও তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অবলোকন করে মনে হচ্ছে, আমাদের এখানে যাঁরা শিক্ষিত ও আলোকিত বলে বিবেচিত, এ সময়ের পপুলার ভাষায় ‘সিভিল সমাজ’-এর অংশ, তাঁদেরও অনেকের কথা বা বক্তব্য অনেকটা ‘চিলে কান নেয়ার’ লক্ষণদুষ্ট।
ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সরকারি দল ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সিভিল সমাজের একটি বড়ো অংশই তাঁদের বক্তব্যে ও লেখায় ড. ইউনূসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা বলতে চান, সরকারের পদক্ষেপের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। দেশের সবেধন নীলমণি নোবেল বিজয়ী একজন বাংলাদেশি ব্যক্তির (কেউ কেউ বলেন মুসলিম) নোবেল প্রাপ্তির বিষয়টাকে আমরা জাতি হিসেবে মর্যাদা দিতে পারি নি। অনেকে আবার বলছেন, অন্য কেউ কেউ নোবেল প্রাপ্তির আশায় ছিলেন, কিন্তু পান নি বলেই হিংসার বশবর্তী হয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ কেউ আরো খানিকটা এগিয়ে বলছেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের পথিকৃৎ মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে স্বীকৃত গ্রামীণ ব্যাংকের উপকারভোগী নারীদের ক্ষতি হয়েছে এবং সরকারের এই পদক্ষেপ নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে অনন্য অবদান রাখা সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দেশকে অনেকদূর পিছিয়ে দেবে।
আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, এখানে বাস্তবতার যথাযথ বিশ্লেষণ না-করেই ড. ইউনূসের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রশংসনীয় মডেল এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটিকে ভুলভাবে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয় দুটিকে আলাদা করে না-দেখলে প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হবার আশংকা থেকে যাবে।
দারিদ্র্য দূরীকরণের অন্যতম বাধা দুর্নীতি দূর করতে কমবেশি আমরা সবাই সোচ্চার। দুর্নীতি দূর করবার মূল প্রক্রিয়া হিসেবে রাষ্ট্রসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করবার বিষয়টি আমরা সবাই মিলে চিহ্নিত করেছি, যা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। সুশাসন ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে ড. ইউনূসকেও সর্বদাই সম্মুখসারিতে সরব হিসেবে পেয়েছি আমরা। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর সফল রূপকারকে নিয়ে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে ৭০০ কোটি টাকার অনিয়মের বিষয়টি উদঘাটিত হবার পর সরকার যখন গ্রামীণ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চেষ্টা করছে, তখনই আমরা ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কার পেয়েছে এই যুক্তিতে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছি, যেটা সম্পূর্ণভাবে একটি স্ববিরোধী ও আত্ম-পরাজয়ী অবস্থান। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পদ্মাসেতু প্রকল্প, দেশের তেল-গ্যাস সম্পদ ব্যবহারের নীতি প্রণয়ন প্রভৃতি বিষয়ের মতো গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে পদক্ষেপেও সরকারের বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি রয়েছে। সরকারের এই সীমাবদ্ধতা এবং ব্যর্থতার সমালোচনা নিশ্চয়ই হওয়া উচিত এবং এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া সকল নাগরিকের দায়িত্ব। সরকারের পদক্ষেপ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’– অনেকের এই বক্তব্যের ভিত্তি আছে ধরে নিলেও বিশেষ মর্যাদা, ভাবমূর্তি আর আন্তর্জাতিক প্রভাবের দোহাই দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যাবে না, এমন কথা বলা প্রকৃতপক্ষে জবাবদিহিতার বিষয়টিকে দুর্বল এবং উচ্চকোটি বা এলিট পক্ষপাতদুষ্ট করে তোলে। এই মনোভাব ‘আইনের চোখে সকলেরই সমান’– গণতন্ত্রের এই ভিত্তিটাকে দুর্বল করে দেয়।
বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বারবারই যেমন সম্মান কুড়িয়েছে, তেমনি এর বিপরীতে ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দুর্নীতি ও ভাবমূর্তি ভূলণ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি সবক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পিস্তল ঠেকিয়ে কারো জিনিসপত্র কেড়ে নিলে তা হয় ছিনতাই, গরিব কেউ অগোচরে অন্যের ঘর থেকে টাকাপয়সা বা মালসম্পদ সরিয়ে নিলে তা হয় চুরি, ফাইল আটকিয়ে টাকাসহ অন্যান্য সুবিধা নিলে তা হয় ঘুষ, আর উচ্চপর্যায়ে থেকে সাগরচুরি (পুকুরচুরি)-র ঘটনাগুলোকে আমরা সচরাচর দুর্নীতি/কেলেংকারী হিসেবেই দেখি। তাদেরকে আমরা চোর বলি না। সমাজে ছোট চোরদের মতো তারা সংকুচিত ভাব নিয়ে চলেন না, বরং মিডিয়া থেকে শুরু করে সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সকলের সাথেই তাদের দাপটের সাথে চলাফেরা করতে দেখি।
ভাষা আন্দোলনসহ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ সারা পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে যেমন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনেক উচ্চে তুলে ধরেছে, তেমনি ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনাটি তাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ, মার্কিন সরকারসহ ন্যাটোভুক্ত দেশের সরকারগুলোর কাছে কখনই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ঘটনা নয় বরং চিহ্নিত হয় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। আর ১৯৭৫ সালের আগস্ট হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে দেশকে সামরিক শাসন ও পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেবার ঘটনায় মার্কিন সরকার ও তার মিত্রদের ভূমিকা কারো অজানা নয়।
দেশের ভাবমূর্তি লিঙ্গনিরপেক্ষ বিষয়ও নয়। তসলিমা নাসরিনকে যখন দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়, সারা পৃথিবীতেই তখন নিন্দার ঝড় ওঠে, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিও ভূলুণ্ঠিত হয়; কিন্তু তখনো আমাদের দেশের হাতেগোনা মুষ্টিমেয় কজন নারী-মানবাধিকার এবং আইনি অধিকার নিয়ে কর্মরত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় নি। বাংলাদেশের উচ্চ মাতৃমৃত্যু হার, বাল্যবিবাহ, বাল্যমাতৃত্ব এখনো অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। সিডও সনদের ২ নম্বর ধারা এখনো সংরক্ষিত। এগুলোও বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ভূলুণ্ঠিত করছে। কারণ বাংলাদেশের যে সকল অর্জন সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে প্রশংসনীয় জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, যেমন জনসংখ্যার হার কমানো, কৃষিতে বিপ্লব, ক্ষুদ্রঋণ, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানার প্রসার ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তার প্রতিটিই মূলত নারীদের অদৃশ্য, বিনা ও অল্প বেতনের শ্রমের মধ্য দিয়ে অর্জিত। দুঃখজনকভাবে আমরা দেখি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় (রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে) যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা ‘আমরা দেশের জন্য বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আনি, কাজেই সরকারের কাছ থেকে আমাদের আর্থিকসহ অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য’– ব্যবসায়ী ও শিল্প-মালিকদের এই অবাস্তব দাবি মেনে নিয়ে তাদের বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছেন। অথচ এর বিপরীতে শ্রমিকনারী ন্যূনতম জীবনধারণ উপযোগী বেতনও পাচ্ছেন না। যদিও এই শ্রমিকনারীদের অতি সস্তা শ্রমের বিনিময়েই উল্লিখিত বৈদেশিক মুদ্রাগুলো আসছে। আমরা মার্কস-এর সারপ্লাস ভ্যালু সম্পর্কে জানি। তবে এটা বুঝতে মার্কস পড়ারও দরকার হয় না যে, বাংলাদেশে শ্রমিকনারীদের শ্রম অতি কম মূল্যে পাওয়া যায় বলেই অন্যদেশ থেকে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানা এখানে স্থানান্তরিত হচ্ছে। মালিক বা এখানকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা কাঁচামাল দেখে তারা এখানে আসছে না।
আমরা জানি, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ঢাকা শহর পৃথিবীর ১৪০টি শহরের মধ্যে বসবাসের উপযোগিতার দিক থেকে ১৪০তম, অর্থাৎ প্রায় বসবাসের অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায়। এজন্য দায়ী কারা? সরকার, রাজনৈতিক দল, এনজিও, ব্যবসায়ী ও তাদের বিভিন্ন সংগঠন ও নগর পরিকল্পনাবিদগণসহ অনেকেই এবং ভূমিদস্যুরা তো অবশ্যই। কিন্তু এ বিষয়ে কোথাও কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। কেবল ভাবমূর্তি হলে এত মাথাব্যথা হতো না, যদি রাষ্ট্র, তার নীতি ও এর বাস্তবায়ন প্রশ্নের মুখে না পড়ত, যা মানুষের জীবন-জীবিকাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের বর্তমান যে মডেল, তার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়ন আদৌ সম্ভব কি না সেটা দেখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। গ্রাম ও বস্তিবাসী নারীদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের কাজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক নারী অধিকার ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের মাধ্যমে এটা উপলব্ধি করা দুরূহ নয় যে, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে গ্রামীণ মডেল কোনোক্রমেই কার্যকরী কোনো মডেল নয়। দীর্ঘ ব্যাখ্যায় না-গিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়, বর্তমানে যে সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে তাকে চ্যালেঞ্জ না-করে বা তার কাঠামো, বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন না-করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। গ্রামীণ মডেল স্ট্যাটাস ক্যু বজায় রেখেই ক্ষুদ্রঋণসহ অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনা করছে। সুতরাং এর দ্বারা নারী বা দরিদ্রের ক্ষমতায়ন কতটুকু সম্ভব তা সহজেই বোধগম্য।
এটা পরিষ্কার যে দরিদ্র নারীরা যখন ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কোনো একটা জিনিস তৈরি করে, তখন সেখানে তারা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও শ্রম বিনিয়োগ করে থাকে। আমরা জানি তাদের কোনো শিক্ষা নেই, প্রশিক্ষণ নেই। স্বল্প পুঁজিতে তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ সুবিধা ক্রয় করে পণ্যের মানোন্নয়ন করতে পারে না। সুতরাং তারা যখন তাদের পণ্য বাজারজাত করবার উদ্যোগ নেয়, তখন তাদের শ্রমের মূল্য বাদ দিয়েই তারা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। কারণ তা করা না-হলে তারা বাজারে টিকে থাকতে পারে না। ক্ষুদ্রঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ উচ্চহারে (কম করে হলেও ২৫%) সুদ দিতে হয়, তাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে রেট অব রিটার্ন যা আসে, তা আদৌ লাভজনক হয় কি না, বিশেষজ্ঞদের সে হিসাব করে দেখা দরকার। এই হিসেবটা করা হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, এ পদ্ধতিতে দারিদ্র্য দূরীকরণ আদৌ সম্ভব নয়।
তবে হ্যাঁ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানেরও কিছু কৃতিত্ব আছে, তবে সেটা দারিদ্র্য বিমোচনে নয়, বরং সারভাইভাল বা কোনোভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করায়। মূলত কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের সাবজিস্টেন্স ইকোনমির যে মূল আধার : পতিত জমি, জঙ্গল, জলাভূমি থেকে দরিদ্র নারীগোষ্ঠী তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাদ্য, লাকড়ি, ঘরকন্নার কাজের জিনিসপত্র, পানি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারত বিনামূল্যে কেবল তাদের শ্রম দিয়ে, তা খুব দ্রুত সংকুচিত হয়ে পড়ছে জমি, জলাভূমি, জঙ্গল ইত্যাদির বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে। এই অবস্থায় দরিদ্র নারীদের শ্রম ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ব্যবহার করে তারা টিকে থাকছে। এছাড়াও, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই মিথকে ভেঙে দিতে পেরেছে যে, ‘দরিদ্র ও নারীরা ঋণপ্রাপ্তির উপযুক্ত বা ব্যাংকেবল নয়’। ক্ষুদ্রঋণ প্রথাগত দাদন ব্যবসায়ীদের উচ্চ সুদের ঋণচক্র থেকে নারী ও দরিদ্রদের মুক্ত হতে সহায়তা করেছে। এছাড়াও ক্ষুদ্রঋণ ও এনজিওদের বিভিন্ন কর্মসূচি নারীদের কতগুলো সামাজিক দাসপ্রথার কবল থেকেও মুক্ত করেছে। উদাহরণ দেয়া যাক। ১৯৯৫-’৯৬ সালে যখন বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিওর তত্ত্বাবধানে গ্রামের দরিদ্র নারীদের লাগানো তুঁতগাছ কেটে ফেলা হলো, তখন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সরেজমিনে ওখানে গিয়ে দেখেছি যে, জোতদার শ্রেণি ধান-পাটের মৌসুমে সস্তাশ্রমের জোগান দেবার জন্য মৌসুমী বিয়ে করত এবং মৌসুম শেষ হলে কিছু টাকাপয়সা ও কাপড়চোপড় দিয়ে অস্থায়ী বৌটিকে বিদায় করে দিত। এনজিওর মাধ্যমে তুঁতগাছ লাগানো ও আয়মূলক কাজে দরিদ্র নারীরা যুক্ত হওয়ায় মৌসুমী বিয়ে করা তখন তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এজন্যই ধর্মীয় কুসংস্কারের সুড়সুড়ি দিয়ে তখন তুঁতগাছ কাটা হয়েছিল। কিংবা উদাহরণ দেয়া যায় ১৯৯৮-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটিরও। ওখানে তৃণমূল জনসংগঠনের জনসভায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাধ্যমে যে আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল, তার নেপথ্যে কাজ করেছিল এনজিওসমূহের ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনার ফলে দাদন ব্যবসায়ে ভাটা পড়ার প্রভাব। দাদন ব্যবসায়ীরাই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে এই আক্রমণ পরিচালনায় ইন্ধন জুগিয়েছিল।
নারীর ক্ষমতায়নসংক্রান্ত আলোচনার সময় একটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতা হিসেবে নারীদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নয়; বরং জামানতবিহীন ঋণ নিয়েও নারী ভেগে যেতে পারবে না-বলেই তাদের গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ আমাদের সমাজে নারীর অবাধ চলাচল ও অভিবাসনের সুযোগ খুব সীমিত। ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানে যে, দরিদ্র নারীদের ঋণ দিলে তা যে করেই হোক ফেরত আনা যাবে। নারীরা সাধারণত ঋণখেলাপি হয় না। আমাদের সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা এবং নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈশিষ্ট্যই ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম, তৈরি পোশাক, চিংড়ি ঘের-এর মতো খাতগুলোতে নারী অংশগ্রহণের প্রাধান্যের কারণ।
সিভিল সোসাইটি ও দেশ-বিদেশের অনেকেই যখন গ্রামীণ ব্যাংকের স্বচ্ছতার প্রশ্নে নেয়া সরকারি উদ্যোগের কারণে সরকারের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন, তখন তাঁরা বলছেন যে, নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে বিরক্ত করা যাবে না। এখানে স্পষ্টভাবে দুটি জিনিস বলা দরকার যে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে প্রথমেই ঢালাওভাবে ‘বিরক্ত করা’ হিসেবে অভিহিত করাটি নিরপেক্ষতাপ্রসূত দৃষ্টিভঙ্গি নয়; যেকোনো যুক্তিতে তা হবে ব্যাংকটির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টাকে ব্যাহত করার নামান্তর। দ্বিতীয়ত, সরকারের ওপরও যুক্তিসংগতভাবে এই চাপ রাখতে হবে যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ যেন কোনোভাবেই পেশাদারিত্বের মানকে ক্ষুণ্ন না-করে বা ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করার পর্যায়ে পর্যবসিত না হয়। এ দুই প্রশ্নেই কোনো ছাড় দেবার উপায় নেই। অনেকের বক্তব্য ও তৎপরতা দেখে মনে হয়, গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে যেন সরকারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ করে ভাবা হচ্ছে। যেন তিনিই কেবল দেশের ভালোমন্দ নিয়ে নিরন্তর ভাবনাচিন্তা করে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে আমার মায়ের বলা একটা কথা মনে পড়ে। মা বলতেন, ‘রাজা চিন্তায় মরেন রাজ্য নিয়ে, আর যোগী চিন্তায় মরে তার ন্যাংটি নিয়ে’। ড. ইউনূস চিন্তা করবেন তাঁর সৃষ্ট গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল নিয়ে তাতে দোষের কিছু নেই। তবে ভুলে গেলে চলে না যে, ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান/দল বড়ো, প্রতিষ্ঠান/দলের চেয়ে দেশ বড়ো (এ উপদেশ অবশ্য আমরা রাজনীতিবিদদের সব সময়ই দিয়ে থাকি)। অনেকে বলছেন, পদ্মাসেতুর অর্থসাহায্য বন্ধে তাঁর ভূমিকা আছে, এ বিষয়ে আমি সন্দিহান। ৯ আগস্ট দেশের বাইরে থেকে ফিরে এসেই ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে ৬০ জন নারীনেত্রীর বিবৃতিতে আমারও স্বাক্ষরদানের কথা কয়েকজনের কাছে শুনতে পেয়ে বেশ বিস্মিত হয়েছি। আমি ভাবতে পারি না কারোর সঙ্গে যোগাযোগ না-করে, মত না-নিয়ে বিবৃতিতে নাম ব্যবহার করার নির্দেশ ড. ইউনূস দিয়ে থাকতে পারেন! অনেক সময় বাঁশের চেয়ে যেমন কঞ্চি দড় হয়, তেমনি এটা গ্রামীণ ব্যাংকেরই কেউ ড. ইউনূসের কাছে তার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য করেছেন বলে ধারণা করি। তবে এই ঘটনা এই আশঙ্কাকে কিছুটা ভিত্তি দেয় যে, তিনি দেশের জনগণের স্বার্থের বাইরে গ্রামীণ ব্যাংক ও নিজেকে নিয়েই বেশি চিন্তিত।
যাহোক, যাঁরা নারীর ক্ষমতায়ন বিঘ্নিত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে সরকারের বিরুদ্ধে এবং গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমার কয়েকটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। প্রথম প্রশ্নটি হচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও উত্তরাধিকারে সমঅধিকার বেশি জরুরি নাকি ক্ষুদ্রঋণ? এই প্রশ্নের কারণ, নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে যখন ধর্মীয় লেবাসধারী জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে সহিংস পন্থায় রাস্তায়, মসজিদে, মাদ্রাসায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটায়, তখন নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে বর্তমানে সরব অনেক ব্যক্তিকেই আমরা কোনো কথা বলতে শুনি নি। আরেকটি প্রশ্ন হলো, আমরা বলতে শুনি যে, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হচ্ছে ৮০ লাখ দরিদ্র নারী! ব্যাপারটা কি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ’-এর মতো? রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কতটা প্রতিফলন ঘটে না-ঘটে তা আমরা আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা দিয়েই দেখতে পাই। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় দরিদ্র নারীদের সিদ্ধান্তের মূল্য কতটুকু তা নিশ্চয়ই এ অভিজ্ঞতা থেকেই অনুমান করা যায়। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয় যে, সার্বিকভাবে নারীদের প্রয়োজনের অগ্রাধিকার যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পানি, রান্নাঘরের জ্বালানি, চলাচলের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো আরো অনেক কিছু, সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গড়ে ওঠা প্রায় ৫০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং যেগুলোর মালিকানা নিয়ে রয়েছে নানা অস্বচ্ছতা, সেগুলোকে অগ্রাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত কি গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা ও কথিত মালিক দরিদ্র নারীরা নিয়েছিলেন?
আসলে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে ক্ষুদ্রঋণকে বড়ো করে দেখানোটা একটা বড়ো ফাঁকি। জেন্ডারকে মূলধারাকরণের প্রশ্নে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উঠলেই আন্তর্জাতিক অর্থ সরবরাহকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, নারীদের জন্য বিরাট অংকের বরাদ্দ রয়েছে, যা দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হচ্ছে। এটা আমি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ‘গ্লোবাল কমিটি অব দা সিভিল সোসাইটি অন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক’-এর জেন্ডার ফোকাল পারসন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টসহ অন্যদের সঙ্গে কাজ করবার সময় মোকাবেলা করেছি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের ওমেন অ্যাডভাইজরি প্যানেলের মেম্বার হিসেবে কাজ করবার সময়ও। বস্তুতপক্ষে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন যেমন হয় না, তেমনি তা জেন্ডার অসমতা দূরীকরণের কাজেও ব্যয় হয় না। ২০০০ সালের আগপর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে দরিদ্র নারীদের উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে ঘূর্ণায়মাণ ঋণ তহবিলের সিড মানি হিসেবে অনুদান প্রদান করত। এই অর্থ উন্নয়ন সংস্থাগুলো ৫-৬ শতাংশের মতো অতি স্বল্প সার্ভিস চার্জে (বিনিয়োজিত অর্থ লেনদেনের ব্যয় ও টাকার মূল্যমান ধরে রাখার জন্য যতটুকু অতিরিক্ত আদায় করা দরকার) দরিদ্র ও নারীদের মধ্যে বিতরণ করত ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে। কিন্তু মূলত গ্রামীণ ব্যাংক মডেলের সাফল্যের দোহাই দিয়ে (যা মূলত গ্রামীণের উচ্চ সুদ ও ঋণ আদায় পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করার একটি উসিলা ছিল), বিশ্বব্যাংকের চাপে সব দাতাসংস্থাই পরে এই তহবিল প্রদান বন্ধ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে তহবিল বন্ধ করার প্রকৃত কারণ ছিল, সহনীয় সার্ভিস চার্জ সম্বলিত এ ধরনের অর্থ ছাড় করা হলে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা দূর করা। আমি মনে করি, গ্রামীণ ব্যাংকজাতীয় বড়ো ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর স্বার্থে এবং বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে সিড মানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটাই বরং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহারকে বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং উচ্চ মুনাফা ব্যতিরেকে দরিদ্র নারী-পুরুষদের আর্থিক সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে স্বাবলম্বী হবার নামে মুনাফামুখী ঋণদানকারী সংস্থায় রূপান্তরিত করেছে। এই প্রবণতাকে দেশব্যাপী বা আরো যথার্থভাবে বললে বিশ্বব্যাপী এক ক্ষতিকর রূপদানে এ মডেলটি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রিয়ভাজন ‘মডেল’-এ পরিণত হয়েছে। এর উদাহরণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে লভ্য, যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে; যেমন লাইবেরিয়ান ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা এলএপিও, যারা ১০০ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় এবং যেখানে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ইউএসএ (ড. ইউনূস যার বোর্ড মেম্বার), সিটি মাইক্রোফাইন্যান্স এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক অর্থলগ্নি করছে।
কাজেই গ্রামীণ-এর ক্ষুদ্রঋণ মডেলকে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নের একমাত্র মহৌষধ হিসেবে দাঁড় করানোর নানা ঝুঁকি আছে। ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বিশ্বব্যাংকের স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট পলিসি (সেপ) অনুসরণ করে অনেক দেশেই দুর্যোগ নেমে এসেছে, যা আমরা জানি। এর বিপরীতে যেসব দেশ নিজস্ব নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়, যেমন মালয়েশিয়া; তারা সার্থকভাবেই বিশ্বমন্দা পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পেরেছে। তাই গ্রামীণ মডেলকে একমাত্র উপায় বিবেচনা করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত বৈষম্য দূর করায় কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপকে গৌন ভাববার ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার। তা না হলে আমরা ভবিষ্যতে বড়ো ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারি। দেশকে নিয়ে, দেশের সমাজ-রাজনীতি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন এমন অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকগণ যদি আমার এই আশঙ্কাটির বিষয়ে একটু আলোকপাত করেন, তাহলে তা আমাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে ধারণা করি।
রোকেয়া কবীর মুক্তিযোদ্ধা ও নারীনেত্রী