বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকৃত আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১-এর প্রাথমিক ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। এ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও আলোচনার সূত্রে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শুমারি-পরবর্তী যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রকৃত গণনায় এ সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ১৫ কোটির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা ইউএনএফপিএ ২০০৮ সালেই জানিয়েছিল বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৩ লাখ, সে হিসেবে ২০১১-এ মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটিকেও ছাড়িয়ে যাবার কথা। যে কারণে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত তা নিয়ে নানা তর্কবিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে। এটা ঘটতেই পারে, কারণ প্রকৃত সংখ্যা ১৪ কোটি, ১৬ কোটি বা ১৭ কোটি যাই হোক, এই সংখ্যাটা কেবল একটা জড়সংখ্যাই নয়, এর আড়ালে রয়েছে মানুষ ও তার জীবন, যাদের রয়েছে নানা চাহিদা। জনসংখ্যার ওপরে ভিত্তি করেই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়, হিসেব করা হয় মাথাপিছু আয়ের। আবার এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হলেও জনসংখ্যার একটা বাস্তব চিত্র জানা থাকা দরকার।
ক্ষুদ্রায়তনের এই দেশে বিদ্যমান সম্পদের তুলনায় উল্লিখিত পরিমাণ জনসংখ্যা বড়ো একটা চাপ সৃষ্টি করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে দেশের একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী-পুরুষ প্রতিনিয়ত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও রোগব্যাধিতে ভোগে, যার বড়ো অংশই নারী ও শিশু, সে দেশের বিপুল জনসংখ্যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ দাবি করে। এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার জীবনের ন্যূনতম মান বজায় রেখে জনসংখ্যা সমস্যাকে সম্ভাবনাময় জনশক্তিতে রূপায়িত করে দেশটাকে আরো অগ্রসর করে নিয়ে যেতে হলে খাদ্য ও পানীয় জল, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাসমূহ মেটানোর পাশপাশি ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় জ্বালানির যোগান, কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাতে ব্যাপকায়তন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা আমাদের সামনে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ।
দেশের সিংহভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর হলেও দ্রুত নগরায়ণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাড়তি জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের চাহিদা ইত্যাদি মেটাতে প্রতিবছরই আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যা দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাকে বিরাট হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই হুমকির সমীকরণটা খুব স্বচ্ছ : জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা, আর বিপরীতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কমছে খাদ্য উৎপাদন। এই বিপরীতমুখী প্রলম্বন আমাদের এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, এক্ষুনি সতর্ক উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আমরা ভয়াবহরকম এক সংকটজনক পরিস্থিতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। এই বিপুল জনসংখ্যার জন্য খাদ্য ছাড়াও অন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা যথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট ও যানবাহন এবং জ্বালানির যোগান দেওয়া, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদির জন্য রাষ্ট্রের ওপরে যে বাড়তি চাপ পড়ছে, সে চাপ মোকাবেলা করবার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের এখনো নেই। তাছাড়া অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ওপরেও নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ক্রমাগত বনভূমি উজাড়, নদীনালা-জলাশয় ভরাট, পাহাড় কর্তন ইত্যাদির ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে তা জনজীবনের জন্য হয়ে উঠছে মারাত্মক আরেক হুমকি। এসব বিবেচনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হারকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা খুবই দরকার।
নবপ্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ ভাগই নারী। এই সংখ্যার গরিষ্ঠভাগ নারীই সনাতনী পরিবার ব্যবস্থা ও প্রজনন কর্মভার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজদর্শন ও নানা নির্যাতন-নিষ্পেষণে কাবু। তথ্য-উপাত্ত বলছে, শিক্ষা, প্রশাসন, রাজনীতি ও সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহার করে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ উপার্জনকারী কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও স্বীকৃত। আমরা যখন আমাদের নারীদের প্রচলিত-অপ্রচলিত বিভিন্ন নীতিনির্ধারণমূলক ও উপার্জনমূলক কাজে সাফল্যের সাথে বিচরণ করতে দেখছি, তখনও নারীর প্রতি সমাজের সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাদের প্রতি একের পর এক বিভিন্নমুখী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। কী ভয়াবহ মাত্রায় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা বুঝতে বেশিদূরে যাবার দরকার নেই। গত এক মাসে সংবাদমাধ্যমে যে পরিমাণ নারী নির্যাতনের ঘটনা উঠে এসেছে তা দিয়েই এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করা যায়, যদিও যত নির্যাতনের ঘটনা দেশে ঘটে, প্রকাশিত ঘটনাগুলো তার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
নারীর প্রতি সমাজে বিরাজমান সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে দেখতে চায় একজন ভালো মা, ভালো স্ত্রী, ভালো গৃহিণী হিসেবে। নারী যত শিক্ষিতই হোক, যত উপার্জনকারীই হোক, রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করুক; আমরা তাকে নারী হিসেবেই দেখি। এমনকি সরকার পরিচালনা, মন্ত্রণালয় পরিচালনা, অফিস পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নারী যুক্ত থাকলেও তাকে আমরা সক্রিয় একজন নাগরিক হিসেবে না দেখে নারী হিসেবেই দেখতে চাই। এতকিছুর পরেও আমাদের মনোযোগ থাকে এটা দেখায় যে, তিনি কতটা ভালো মা, কতটা ভালো স্ত্রী, কতটা ভালো গৃহিণী। আমরা দেখতে চাই তারা সন্তান ধারণ, জন্মদান, লালনপালন, পারিবারিক আতিথেয়তা ও ঘরের কাজ করায় কতটা পারদর্শী। অর্থাৎ নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আজো সনাতনী প্রজনন কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে, কিন্তু নারীর প্রতি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি একই জায়গায় থেকে গেছে। আমাদের চারপাশের সমাজ থেকে এ কথার স্বপক্ষে অজস্র উদাহরণ হাজির করা যায়। সম্প্রতি সংঘটিত রুমানা মনজুরের নির্যাতনের ঘটনা যার একটি হতে পারে। তিনি লেখাপড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার মতো কাজে যুক্ত ছিলেন, উপার্জন করতেন, প্রচলিত সংজ্ঞায় তিনি তাঁর সমাজে ক্ষমতায়িত ছিলেন; কিন্তু তাঁর স্বামী ও পরিবারের সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকেও নির্যাতিত হতে হয়েছে, চোখ হারাতে হয়েছে। এতকিছু অর্জন করেও তাঁর অপরাধ ছিল এই যে, স্বামীর দৃষ্টিতে তিনি ভালো স্ত্রী ও তার সন্তানের ভালো মা হতে পারেন নি। যেন ভালো স্ত্রী, ভালো মা হওয়াই নারী জীবনের একমাত্র সাধনা হওয়া উচিত!
নারীর প্রতি সমাজের এই সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কেবল শিক্ষিত হওয়া, উপার্জন করা, অংশগ্রহণ করতে পারাকেই আমরা ক্ষমতায়নের উপাদান হিসেবে দেখছি, ফলে নারী আজ দ্বিগুণ-ত্রিগুণ কর্মভারে পীড়িত হচ্ছে। উপার্জনমূলক কাজে পুরোমাত্রায় যুক্ত থাকার পরও তাকে পারিবারিক, সামাজিক ও শারীরিক নানা ঝক্কির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাতে তার শারীরিক-মানসিক নানারকম চাপ নিতে হচ্ছে। নিতে হচ্ছে সময়ের চাপ। কিন্তু এই অবস্থা অমানবিক। এই অমানবিক অবস্থার পরিবর্তন চাইলে আমাদের অতি অবশ্যই বিদ্যমান সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, নারীকে মানুষ এবং সক্রিয় নাগরিক হিসেবে দেখায় অভ্যস্ত হতে হবে। সমান মর্যাদা ও অধিকার ভোগের অধিকারী হিসেবে তাকে দেখতে হবে, যে অধিকার নারীকে আমাদের সংবিধানই দিয়েছে।
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার যা যা প্রাপ্য তা তাকে দিতে হবে। বিপরীতে নাগরিক হিসেবে নারীর যা করণীয় তা তাদের করতে হবে, সক্রিয় নাগরিক হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আর এটা করতে হলে নারীর ওপর থেকে একের পর এক সন্তান ধারণ ও তার লালনপালনের ভার কমাতে হবে, গার্হস্থ্য কাজের ভার কমাতে হবে। এসব ভার কমলেই তারা রাষ্ট্রের সক্রিয় নাগরিক হিসেবে সামাজিক-রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করবার সুযোগ এবং সময় পাবে। নিজেরা উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত হতে পারবে।
একটা ছেলের ক্ষেত্রে আমরা বলি আগে মানুষ হও, নিজের পায়ে দাঁড়াও, তারপরে বিয়ে-সংসার করো ইত্যাদি। একইভাবে একটি মেয়েকেও আগে মানুষ হওয়া ও নিজের পায়ে দাঁড়াবার অবকাশ দিতে হবে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে এরকম ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ছোটোবেলা থেকেই একটা মেয়ে মানুষ হিসেবে সমান স্বীকৃতি ও মর্যাদা পায় এবং শিক্ষাগ্রহণ, পেশা নির্বাচন ও নিজের ভালোমন্দ নিজেই ঠিক করবার সুযোগ পায়। একজন মানুষের জীবনে ১৫ থেকে ৫০ বৎসর বয়সসীমা হচ্ছে সবচেয়ে উৎপাদনক্ষম সময়। অথচ সনাতনী চিন্তাভাবনার কারণে আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি নারীর এ সময়টা সন্তান জন্মদান ও তার লালনপালনে ব্যয় হয়ে যায়। এই সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই সমাজ থেকে আইন করেও বাল্যবিয়ে দূর করা যাচ্ছে না, কমানো যাচ্ছে না মাতৃমৃত্যুর উচ্চহারও। আইনানুযায়ী যেখানে একটি মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮, সেখানে আমাদের দেশে মেয়েদের গড় বিয়ের বয়স ১৫। এই গড় আমাদের এই ধারণা দেয় যে, দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিয়ে হয় ১২ বছর বয়সের মধ্যে। আর এর ফলে অল্প বয়সেই এই মেয়েদের গর্ভধারণ করে নিজেদের জীবনটা বিপন্ন করবার ঝুঁকি নিতে হয়। এদের একটা অংশের সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে, অনেকে মৃত্যুবরণ করে। এই মৃত্যহার এখনো অগ্রহণীয় পর্যায়ে রয়ে গেছে। ২০১০-এ প্রকাশিত হিসেবে এখনো দেশে প্রতি লাখে ১৯৪ জন মা প্রসবকালে মৃত্যুর শিকার হয়। যারা বেঁচে থাকে তাদেরও সন্তান ও সংসারের ঘাঁনি টানা এবং স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা ছাড়া জীবনে আর কিছুই করা হয়ে ওঠে না। নারীসমাজকে সন্তান ও সংসারের ভারে এভাবে জর্জরিত হওয়ার অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে। তাতে মেয়েরা পড়াশোনা করে নিজে উপার্জনক্ষম হতে পারবে, মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমবে, পরিবারব্যবস্থাপনা করা হবে অনেক সহজ। সন্তানকে ঠিকমতো লেখাপড়া করানো, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া ও মানুষ করে তুলবার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্যও তাদের করায়ত্ত হবে। পরিবার ছোটো হলে জনব্যবস্থাপনায় সুবিধা হবে রাষ্ট্রেরও। বিপুল পরিমাণ মানুষের জীবনমান নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের কোষাগারের ওপর চাপ কমবে। অর্থাৎ সকল মানুষের জীবনের মানগত উন্নয়ন ঘটবে, বিদ্যমান দারিদ্র্যাবস্থার বদল ঘটবে।
নারীর ব্যাপারে সমাজের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিটা বদলালে নারী নির্যাতনের হার কমবে। মেয়েকে কোনো পরিবারেই ভার হিসেবে দেখা হবে না। আর এরকম অনুকূল অবস্থা তৈরি হলে নারীও মুখ বুজে পড়ে থাকবে না, নিজের জীবন গড়ার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের জন্য, দেশের জন্য নিজে ভূমিকা রাখতে উদ্যোগী হবার অবকাশ পাবে। তারা যদি সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকবার সুযোগ পায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে বাল্যবিয়ের হার কমবে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমবে, উন্নতি হবে প্রজননস্বাস্থ্যের। তার অন্যতম প্রধান ফল হবে ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার হার।
কাজেই যত দ্রুত সম্ভব নারীর প্রজনন কর্মভার কমানো ও নারীর প্রতি সমাজের সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সম্ভাব্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে, বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মানদণ্ড স্থাপন। তাতে যেসব পরিবার ও সমাজে নারীর প্রতি সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি আছে, রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রাপ্তির আগ্রহে ওই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা বেরিয়ে আসবে। যেমন যদি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরি প্রাপ্তি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এরকম নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয় যে, বাল্যবিয়ে হয় নি বা পরিবারের কারো সন্তানসংখ্যা একটি বা দুটির বেশি নয় এমন পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে; তাহলে নিশ্চিতভাবে সমাজে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি একটি উদাহরণমাত্র। এই আলোকে চাকুরি ও পদোন্নতি প্রাপ্তি, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তি, স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি, বিনামূল্যে শিক্ষা সুবিধা প্রাপ্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানদণ্ড স্থাপন (ইনডিকেটর সেট) করার কথা ভাবা যেতে পারে। তাছাড়া স্কুল-কলেজের পাঠ কার্যক্রম ও প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা, বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে সামগ্রিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগও গ্রহণ করা যেতে পারে।
সর্বোপরি বলা যায়, নারীর প্রতি বিদ্যমান সনাতনী সমাজ ব্যবস্থায় নারীসমাজকে যে পরিমাণ অমানবিক অবস্থার ভিতর দিয়ে জীবনধারণ করতে হয়, সে অবস্থার পরিবর্তন করা না গেলে সমাজের বর্তমান অসম ও নির্যাতন-নিষ্পেষণমূলক অবস্থায় কোনো স্থায়ী পরিবর্তন আসবে না। এ অবস্থায় কোনো উন্নয়ন উদ্যোগই পুরোপুরি কার্যকর হবে না, বরং তা হবে মূল কারণ টিকিয়ে রেখে পার্শ্ব কারণসমূহ দূরীভূত করবার জন্য শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ।