বিজ্ঞান, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটে উপযোগী বরাদ্দ চাই : নারীকে দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত করার জন্য ১৯টি সুপারিশ
২১ মে ২০১২, ভিআইপি লাউঞ্জ, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা
প্রিয় সাংবাদিক বোন ও ভাইয়েরা,
আপনারা অবগত আছেন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ১৯৯৯ সাল থেকে জাতীয় বাজেটের জেন্ডারভিত্তিক বিশ্লেষণ শুরু করেছে এবং ২০০০ সালে প্রথম জাতীয় বাজেটে নারীর ন্যায্য হিস্যার দাবি উত্থাপন করেছে। এর পর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত আমরা এই কাজটি অব্যাহত রেখেছি। পরবর্তী সময়ে এদেশের অন্য অনেক সংস্থাও জাতীয় বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিটি সামনে তুলে এনেছে। এসব দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় বাজেটেকে নারীসংবেদী করার একটি প্রচেষ্টা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদের এক যুগের অভিজ্ঞতা বলছে, বাজেটে কেবল বরাদ্দ বাড়ানোই শেষ কথা নয়। নির্দিষ্ট বরাদ্দের ব্যয় নিশ্চিত করা, ব্যয়ের যথাযথ পরিবীক্ষণ করা এবং যে উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না-থাকলে বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা নারীর উন্নয়নে যথাযথ ফল প্রদান করে না।
বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারভুক্ত ‘রূপকল্প ২১’-এর আওতায় বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ, যে স্বপ্নের বাস্তবায়নে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিই প্রধান হাতিয়ার। এর আওতায় সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। মাত্র গতকালই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ৫০০ মাধ্যমিক ও ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ উদ্বোধন করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকদের ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া নারী উন্নয়নের জন্য সরকারের আরো সুনির্দিষ্ট ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও অঙ্গীকার রয়েছে; যার মধ্যে উল্লেখ করতে হয় ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ ও ২০১১ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আহ্বানের কথা– ‘শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে নারীর সমান অভিগম্যতা চাই’। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ আহ্বানকে সরকারসহ আমরা সবাই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিলাম। এসব অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। গৃহীত উদ্যোগসমূহ কতটা নারীসহায়ক হয়েছে, না-হলে তার সীমাবদ্ধতাগুলো কোথায় তা খতিয়ে দেখতে এবার আমরা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গত তিন বছরের (২০০৯-’১০ থেকে ২০১১-’১২) বাজেট বিশ্লেষণ করেছি এবং এই খাতের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্ভাব্য উপকারীভোগীদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রণীত হতে যাচ্ছে, তা প্রধানত তৃণমূল পর্যায়ের নারী-পুরুষ, সমাজকর্মী, নাগরিকসমাজ, সংবাদজনদের সচেতন ও তথ্যসমৃদ্ধ করার জন্য; যাতে সকল মহলের সক্রিয় প্রচেষ্টা ও উদ্যোগী ভূমিকায় নীতিনির্ধারক মহল তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা নারীর ক্ষমতায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়।
প্রিয় সংবাদকর্মী বন্ধুগণ,
আমরা জানি যে, তথ্য মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটায়। যার কাছে যত তথ্য, সে তত ক্ষমতাবান। এ উপলব্ধি থেকে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সকল কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহায়তায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং জনকল্যাণমূলক তথ্যাদি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, সচেতন করা, সম্পৃক্ত করা এবং উদ্বুদ্ধ করা। তাছাড়া, জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করাও এই মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য ইতোমধ্যে তথ্য অধিকার আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য জনগণকে জানানো এবং তার মাধ্যমে সচেতন করাও এই মন্ত্রণালয়ের একটি লক্ষ্য।
পুরুষের তুলনায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী নিরক্ষর এবং অল্পশিক্ষিত হওয়ার কারণে তথ্যসংযোগের মাধ্যমেই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সচেতন করে তোলা যায়। বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্যরক্ষা এবং পুষ্টি বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটি বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে, যদিও তা পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টাব্যাপী সরাসরি নারী উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনও প্রতিদিন ৫০ মিনিট স্থায়ী এবং পাক্ষিক অতিরিক্ত ৫০ মিনিট স্থায়ী অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। গণযোগাযোগ অধিদপ্তর নারী উন্নয়নের ওপর বছরে ১,৬০০টিরও অধিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০টি নারীবিষয়ক প্রবন্ধ এবং ৪টি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়। তথ্য অধিদপ্তর গড়ে প্রতি বছর নারী উন্নয়ন সম্পর্কিত ২৬০টি, প্রেস ইনস্টিটিউট ২০০টি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ১০০টি ফিচার প্রচার ও প্রকাশ করে থাকে। এসব কার্যক্রম নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বাস্তবায়িত এ কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। সর্বোপরি এসব কর্মকা- নির্মাণে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ একেবারেই নগণ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী এসব উদ্যোগের নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা এবং পুরুষরাই সক্রিয় প্রদায়কের ভূমিকায় থাকেন। সরকারিভাবে নির্মাতা, গবেষক, লেখক, সম্পাদক, ভিডিওগ্রাফার, প্রচারক বা প্রযোজকের পদে বা দায়িত্বে নারীকে খুব কমই দেখা যায়।
আমরা মনে করি, সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারবিরোধী যে মতাদর্শ বিরাজ করছে, নারীকে ছোটো করে দেখার যে মানসিকতা এখনো অনেক মানুষ ধারণ করে আছে, এসব দূর করবার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভুক্ত পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ না-করলে কেবল নারীকে সচেতন করে নারীর ক্ষমতায়নে বড়ো কোনো সুফল আনা যাবে না। এজন্য বিভিন্ন তথ্য উপকরণে নারীর সনাতনী ভাবমূর্তি তুলে না-ধরে সমাজের কাছে তাদের কর্মজীবী, সমাজসেবী, রাজনীতিক ভাবমূর্তি তুলে ধরার ব্যাপারে বেশি যত্নবান হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের নীতি রয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উন্নয়ন চ্যানেল স্থাপন, বেতারের এফএম সম্প্রসারণ এবং কমিউনিটি রেডিওর কার্যক্রম বৃদ্ধি করে ধর্মীয় কুসংস্কার, নারীর সম্পত্তির অধিকার, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল, দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্কতা, নারীকে উত্যক্তকরণ রোধ, নারী ও শিশু অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর। কিন্তু এসব কাজ যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা বলার কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন পেশায় যোগ্যতাসম্পন্ন সচেতন নারীর উপস্থিতি সত্ত্বেও তথ্য ও গণমাধ্যমে নারীকে সক্রিয় ভূমিকায় এনে নারীর নিজস্ব সচেতন ভাবনা তুলে ধরার উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই।
আমাদের গবেষণার জন্য নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টার তৃণমূল নারী-পুরুষদের সাথে আলোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, তাঁরা বিভিন্ন উৎস (রেডিও-টিভি, মাইকিং, ব্লক সুপারভাইজার, স্বাস্থ্যকর্মী, এনজিওকর্মী, মোবাইল ফোন) থেকে শিশুদের টিকাদান, জন্মনিবন্ধন, কৃষি, স্যানিটেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য পেয়ে থাকেন। তবে তাঁরা তথ্য অধিকার আইন, কিংবা বাড়ির কাছে তথ্যকেন্দ্র আছে কি না সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। তৃণমূল নারীদের মধ্যে চাহিদা রয়েছে কর্মসংস্থান, আইনি সেবা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের।
প্রিয় বন্ধুগণ,
আমরা দেখেছি গত ৩ বছরে (২০০৯-’১০ থেকে ২০১১-’১২) তথ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে মোট বাজেটের .৩২ শতাংশ, .৩৭ শতাংশ ও .৩৭ শতাংশ। মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন (জিবিআর) অনুযায়ী জানানো হয়েছে, ২০১১-’১২ অর্থবছরে মোট বাজেটের মাত্র ১০ শতাংশের উপকার পাবে নারী। একই হিসাব মতে, এই মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দের মাত্র ১৯ শতাংশ ব্যয় হবে নারীর কল্যাণে। জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের একটি হিসাব তুলে ধরেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এই হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১০-’১১ অর্থবছরে তথ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৪.৬১ শতাংশ। ২০১১-’১২ অর্থবছরে নারীর অংশ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৫.৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে নিয়োজিত মোট কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ১১.৮৩ শতাংশ নারী, যা ২০১০-’১১ অর্থবছরে ছিল ৭.৪৫ শতাংশ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রোগ্রামের মাধ্যমে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ, যার মাধ্যমে জনগণের তথ্য পাবার সুযোগ বেড়েছে। এছাড়াও এক্ষেত্রে কাজ করছে সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি-বিষয়ক গবেষণা, উন্নয়ন, প্রসার এবং এসবের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি অর্জনই হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান লক্ষ্য।
এই মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার একটি ধারা হলো– বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি-বিষয়ক সকল কার্যক্রমে নারীর পূর্ণ এবং সমঅংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করা। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে অদক্ষ হবার কারণে গ্রামীণ নারীরা, যারা বাংলাদেশের নারী জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি কেন্দ্রে (আইসিটি সেন্টার) গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে নিয়ামক বা পরিচালকের ভূমিকায় তাদের উপস্থিতি অস্তিত্বহীন বললে অত্যুক্তি হবে না। তাছাড়াও রয়েছে নারীদের অবাধ চলাচলে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। তবে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি গ্রামীণ নারীকেও আজ তথ্যজগতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি প্রতারণাহীনভাবে বিদেশে কর্মরত আত্মীয়স্বজনের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা পেতে পারছেন। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিসম্বন্ধীয় তথ্যও তাঁরা এর মাধ্যমে পাচ্ছেন। কিন্তু মোবাইল সেটের ওপর উচ্চ কর বহাল থাকায় বিভিন্ন সুবিধাসম্বলিত মোবাইল ফোন সেট উচ্চমূল্যে ক্রয় করার সামর্থ্য অধিকাংশ নারীই রাখেন না।
আজকাল গ্রামগঞ্জের নারীরা ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছেন, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি তাঁদের লাভজনক বাজারের সন্ধান দিতে পারত, বেকার নারীকে লাভজনক শ্রমবাজারের সন্ধান দিতে পারত; কিন্তু তথ্যকেন্দ্রের অপ্রতুলতা, ব্যবহারদক্ষতা না-থাকা, ভাষাজ্ঞানে ঘাটতি থাকা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রবাহ না-থাকা, ইত্যাদি কারণে তাঁরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
আমরা সবাই জানি, তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণকেও দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে। নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁদের যাতায়াত অবাধ না-হওয়ায় বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জোগাড় করতে না-পারলেও উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে তাঁরা সে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু এখনো আমরা সব উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পর্যাপ্ত সুবিধা উন্মুক্ত করতে পারি নি। ২০০৯-’১০ অর্থবছরের বাজেটে ৭টি বিভাগে উপজেলা পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রকল্পটি নারীবান্ধব হলেও বরাদ্দ ছিল অত্যন্ত কম। তাছাড়া কয়টি বালিকা বিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন করা হবে তার কোনো লক্ষ্যও স্থির করা ছিল না। ফলে অনেক বালিকা বিদ্যালয়ই এই প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পায় নি। অনেক বালিকা বিদ্যালয়ে যে বিজ্ঞান বিষয়টি পড়ানোই হয় না, তার একটি প্রধান কারণ এটিই। অথচ গত তিন বছরের প্রবণতা লক্ষ করে ১২ এপ্রিল ২০১২ দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, ‘বিজ্ঞানে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম, কিন্তু সাফল্য বেশি’। এই সাফল্যের সূত্র ধরে আমাদের উচিত মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করে দেয়া। উপযুক্ত বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমেই যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মেয়েরা দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড়ো পরিবর্তন সাধন করতে পারে। আমরা সেদিকে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।
চলতি বাজেটে গৃহীত ‘বেসিক আইটি স্কিলস ট্রান্সফার আপটু উপজেলা লেভেল’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পটিও জেন্ডার সংবেদনশীল। কিন্তু এখানেও নারীর জন্য সচেতনভাবে কোনো কোটা গ্রহণ করা হয় নি। চলতি বাজেটে গৃহীত ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন এসআইসিটি’ শীর্ষক প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও নারীর জন্য কোনো নির্দিষ্ট কোটা না-থাকায় এই ফেলোশিপের সুবিধাও পুরুষই বেশি পাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৬০টিরও অধিক কমিউনিটি ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতিটি সেন্টারে একজন পুরুষ ও একজন নারী অপারেটর বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগদানের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে (নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা) তৃণমূল নারী-পুরুষদের সাথে মতবিনিময়ে জানা গেছে, ৬২.৫ শতাংশ তৃণমূল নারীর এসব তথ্যকেন্দ্র সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই। কমিউনিটি পর্যায়ের নারী-পুরুষরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময় এই কেন্দ্রগুলো তালাবন্ধ থাকে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও যে পরিমাণ আইসিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর সুবিধাও নারীদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। দেখা গেছে, বিসিসির বিভাগীয় কেন্দ্র এবং স্থাপিত ল্যাবসমূহে ১১০০ জনেরও অধিক শিক্ষককে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাত্র ১৮ শতাংশ ছিল নারী, যদিও নীতি ছিল সমানসংখ্যক নারী-পুরুষ এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
সরকারি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ হচ্ছেন নারী। ডিরেক্টরেট অব টেকনিক্যাল এডুকেশন মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলোতে ভোকেশনাল কোর্স এবং কম্পিউটার কোর্স চালু করেছে। কিন্তু দেখা গেছে, এই কোর্স ঢাকা শহরের কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ ছাড়া আর কোথাও চালু করা হয় নি। এই অবস্থা প্রথমত নারীর এবং দ্বিতীয়ত বড়ো শহর এবং ছোটো শহর বা গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্যকেই তুলে ধরে।
২০০৯-’১০ থেকে ২০১১-’১২ তিন বছরে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে মোট বাজেটের .৩৭ শতাংশ, .৩৮ শতাংশ ও .৩৭ শতাংশ। জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন (জিবিআর) অনুযায়ী বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২০১১-’১২ অর্থবছরের সর্বমোট বাজেট বরাদ্দের মাত্র ২০ শতাংশের উপকার নারী পাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। একই হিসাব মতে, এই মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব ব্যয়ের মাত্র প্রায় ২১ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের মাত্র ১৯ শতাংশ নারীগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হবে বলে মনে করা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে উপকারভোগীদের হিসাব নিয়ে দেখা গেছে, জেন্ডার সংবেদনশীল প্রকল্পগুলো থেকে নারী যে অংশ পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, বাস্তবক্ষেত্রে নারী তা পায় না।
এই পরিস্থিতিতে আমরা আসন্ন ২০১২-’১৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে বিজ্ঞান, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর প্রতি ন্যায্য সুবিধা নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত সুপারিশমালা পেশ করছি :
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সুপারিশ
- তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নারী অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে জাতীয় বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন খাতে নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট উপযুক্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
- তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বাজেটীয় সুবিধাগুলো যথাযথভাবে গ্রহণের জন্য নারীর জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রসারিত করতে হবে।
- ইউনিয়ন স্তরে কেবল নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং এই লক্ষ্যে ‘ক্যাশ ফর এডুকেশন’ শীর্ষক নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক প্রকল্পটির আদলে ‘ক্যাশ ফর ট্রেনিং অন আইসিটি’ শীর্ষক একটি নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
- গ্রামগঞ্জের মেয়েশিক্ষার্থীদের কম্পিউটার সাক্ষরতা ও দক্ষতা প্রদান করতে সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এই ব্যবস্থা নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি নগর ও গ্রামের মধ্যকার শিক্ষা-আয়-ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাস করবে।
- কম্পিউটার শিক্ষাকে সহায়তা প্রদানের জন্য গ্রামগঞ্জ স্তরের বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণের এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের একটি পূর্বশর্ত হলো ইংরেজি ভাষা জানা।
- উচ্চতর শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি এবং প্রকৌশল শিক্ষায় নারীর প্রবেশের পথ সুগম করার জন্য কেবল নারীর জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
- তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো স্থাপনের সময় নারীর চলাচলের প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে কেন্দ্রগুলোতে নারীদের আগমন উৎসাহিত করতে এলাকার নারীদের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে তাঁদের জন্য সুবিধাজনক সময় নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
- ‘বেসিক আইটি ট্রান্সফার আপটু উপজেলা লেভেল’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে এবং এই প্রকল্পে নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
- চলতি বাজেটে গৃহীত ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন এসআইসিটি’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে নারীর জন্য কোটা নির্দিষ্ট করতে হবে।
- বিসিসির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ইন্ট্রুডাকশন টু অফিস অ্যাপ্লিকেশন আন্ডার ওমেন ইন ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে সমানসংখ্যক নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
- প্রতিটি কমিউনিটি ই-সেন্টারে একজন পুরুষ ও একজন নারী অপারেটর বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগদানের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
- বিটিসিএল, টেলিটক, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, বিসিএসআইআর-এর মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যোগাযোগপ্রযুক্তি, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে নারীদের জন্য শিক্ষানবিশ এবং ইন্টার্ন হিসেবে হাতেকলমে কাজ করার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে নারীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সুপারিশ
- তথ্য ও গণযোগাযোগ ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন, প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও কোটাভিত্তিক শিক্ষানবিশ এবং ইন্টার্ন হিসেবে হাতেকলমে কাজ করার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের এই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে উৎসাহিত করতে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে।
- একই উদ্দেশ্যে সাংবাদিকতা, গণযোগাযোগ, চলচিত্র-টেলিভিশন-রেডিও বিষয়ক অধ্যয়নে নারীদের উৎসাহিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষালয়ে যাবার জন্য মেয়েশিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা দরকার।
- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার মাধ্যমে সাংবাদিক, সম্পাদক, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী ও নির্মাতা, প্রযোজক, গবেষক, আলোকচিত্রী, ভিডিও চিত্রগ্রাহক প্রভৃতি পদে নারীদের কোটা ও অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশনের ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা দরকার।
- তথ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তৃণমূল নারীর তথ্য প্রয়োজনগুলো বিবেচনায় গ্রহণ করে নতুন নতুন তথ্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে; যেমন রেডিও-টিভিতে কৃষি ও কৃষিপণ্য সম্পর্কিত, হাঁসমুরগি পালন সম্পর্কিত, স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কিত, দেশ-বিদেশের কর্মসংস্থান সম্পর্কিত, নারীর অধিকার এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত অনুষ্ঠান এবং ‘মীনা’ প্রোগ্রামটি আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রচার করা।
- নারী উন্নয়ন ও নারীর সমানাধিকার প্রসারে নারীদের দ্বারা পরিচালিত কমিউনিটি রেডিও প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থা রাখা দরকার।
- ব্যক্তিমালিকানায় নতুন রেডিও স্টেশন ও টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়ার সময় নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি বন্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার শর্ত জুড়ে দিয়ে তা পূরণের জন্য রাজস্ব প্রণোদনা দিতে হবে।
- দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যৌথ কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রকল্পটি পৌঁছে দিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বন্ধুগণ
আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও ইউ এন ওমেনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আশা করি, নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নের কথা চিন্তা করে এদেশের নারীসমাজকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সুপারিশসমূহ গণমাধ্যমে তুলে ধরা ছাড়াও আপনারা আপনাদের নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।