জেন্ডার বাজেট বলতে আমরা কী বুঝি? এটা কি নারীর জন্য আলাদা বাজেট নাকি জাতীয় বাজেটে নারীর হিস্যা?

সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে এটা আলাদা কোনো বাজেট নয়। আমাদের জাতীয় বাজেটকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলাই জেন্ডার বাজেটের মূল লক্ষ্য। নারীর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলার প্রয়োজন এজন্য হচ্ছে যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূর করে একটি সমতাপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়। নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার, যা এখন সংবিধান কর্তৃক বিধিবদ্ধ। এটা এর আদর্শিক দিক। আর অর্থনৈতিক ও বাস্তব দিক হচ্ছে জনসংখ্যার ৫০ ভাগ নারীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে এবং ত্বরান্বিত করবে।

বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হলে শুধু নারীকে লক্ষ্য করে কর্মপরিকল্পনা নিলেই হবে না। পাশাপাশি নারী যাতে তার দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে, সেজন্য নারীর প্রতি বৈরী পরিবেশকে পরিবর্তন করে নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এটা না করা হলে নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যে বিনিয়োগ তার অনেকটাই অপচয়ের পথে যাবে। আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে এই পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ মোটাদাগে পুরুষের হাতে। সুতরাং পুরুষের মধ্যেও কাজ করতে হবে। সেজন্য কর্মপরিকল্পনাও সেভাবেই সাজাতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য অন্যতম কৌশল বা উপায় হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থাকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল করে তোলা। এখানে উদ্দীষ্ট জনগোষ্ঠী শুধু নারী নয় বরং নারী-পুরুষ উভয়েই, যেখানে সংখ্যায় পুরুষই বেশি। ঠিক তেমনি নারী উন্নয়ন নীতিমালা বা জেন্ডার বাজেট কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যে প্রশিক্ষণ তারও সরাসরি উপকারভোগী হিসেবে পুরুষদের সংখ্যাই বেশি। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, জেন্ডার বাজেট শুধু নারীর জন্য বাজেট নয়।

আবার সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে সরাসরি নারীকে লক্ষ্য করে যে সমস্ত কার্যক্রম আছে অথবা শিক্ষাবৃত্তি, নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কার্যক্রম, প্রভৃতির লক্ষ্য হচ্ছে সরাসরি উপকারভোগী যাতে নারী হতে পারে। কিন্তু এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে যে বরাদ্দ, তার খরচের বিভাজিত হিসাব নিলে দেখা যাবে, এখান থেকে ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত ব্যয় ও প্রশিক্ষক হিসেবে বেতনভাতা অথবা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ থেকে অর্জিত মুনাফা, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার সরাসরি উপকারভোগীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই হচ্ছেন পুরুষ। সুতরাং যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, নারীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সরাসরি উপকারভোগী হিসেবে পুরুষরাও বাদ যাচ্ছেন না। অর্থাৎ, জেন্ডার বাজেটের অর্থের উপকারভোগী কেবল নারী নয়, পুরুষও।

বাংলাদেশে বর্তমানে চলমান উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হিসেবে নারীর উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণকে ধরা হয়েছে। তা ছাড়া, রাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্ধেক অংশ হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধিও এর অন্যতম লক্ষ্য।

বর্তমানে ৪৩টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন দেওয়া হয়ে থাকে জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময়। গত শতকের শেষ দিকে বাংলাদেশে জেন্ডার বাজেট নিয়ে নারীসমাজ উচ্চকিত হতে শুরু করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনাব এসএএম কিবরিয়ার সময়ে। দুই দশকে এ পরিমাণ অগ্রগতি কম কথা নয়। তবে সংখ্যার মারপ্যাঁচের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে জেন্ডার বাজেটকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে যতœবান হওয়া বেশি প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ করে তোলা। 

বর্তমানে বাজারে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা কমে আসছে, যার সিংহভাগই নারী। জনগণের ৫০ ভাগ নারীকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়। পায়ে ২ জোড়া স্যান্ডেল, পরনে ২টি রঙিন শাড়ি বা লুঙ্গি এবং ২ বেলা ভাত খাওয়ার উন্নয়নের স্তর থেকে পরের ধাপে যেতে হলে অবশ্যই নারীকে সমান উ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *